রাজাকারের ছেলে কুলি কুদ্দুস হতে যাচ্ছেন কোতোয়ালি আ.লীগের সভাপতি!
নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের যোদ্ধা অপরাধী রাজাকারের এক ছেলেকে ঢাকার কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি করে প্রস্তাবিত নাম পাঠিয়েছেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। এক সময় ওই রাজাকারের ছেলে সদরঘাট এলাকার কুলি ছিলেন। বরিশালের লঞ্চে কলা বিক্রি করেছেন। তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের দল ফ্রিডম পার্টি ও বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল করার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও হত্যা মামলা, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার একাধিক ফ্লাটের মালিক এবং ফ্রিডম পার্টির নেতা কালা লিয়াকতের ক্যাডার হিসেবে সদরঘাট এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধর, অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে যান বলে অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি! এমন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ৩৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কোতয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান মিয়াজী বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঝালকাঠি জেলা ইউনিট কমান্ডারের স্বাক্ষরিত ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধী রাজাপুর থানার রাজাকারদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকায় ৩ নম্বরে রয়েছেন মো. নুর হোসেন হাওলাদার।
তার বিরুদ্ধে রাজাপুরে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাক-হানাদারদের সহযোগিতা করে ব্যাপক গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সেই রাজাকার মো. নুর হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদারকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এক সময় কুদ্দুস বরিশালের বিভিন্ন লঞ্চে ফেরি করে কলা বিক্রি করতেন। সদরঘাটের কুলির কাজ করতেন।
পুরো একটি অশিক্ষিত মানুষ। কুদ্দুসের ঘটনাটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, গত ১৬ জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানার সাথে কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের কমিটি জমা দেওয়া হয়। আর কোতয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ওই রাজাকার সন্তানকে প্রস্তাব করে স্বাক্ষর করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
ওই রাজাকার সন্তানসহ মহানগরের বিভিন্ন থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদের অনেকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিরক্ত হন। গত ২৪ শে জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের উপর রেগে যান এবং তিনি বলেন এ কমিটি শিকল বন্দী থাকবে। জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদারের বাবা নূর হোসেন হাওলাদার ঝালকাঠি থেকে পালিয়ে এসে ঢাকায় আশ্রয় নেন।
সে সময় অনাহারে থেকে আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার সদরঘাট এলাকায় কুলির কাজের পাশাপাশি কলা বিক্রি করতে শুরু করেন । পরে ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার কালা লিয়াকতের সঙ্গে পরিচিত হয় কুদ্দুসেরলও। এরপর তিনি সদরঘাট এলাকায় ছিনতাইকারী ও একটি ছিসকে চোর গ্রুপের দলনেতা হয়ে ওঠেন। সে সময় তার গ্ৰুপটি যাত্রীদের ব্যাগ কেটে এবং জোর করে টাকা আদায় করতো সদরঘাটে। যখন ফ্রিডম পার্টির ক্ষমতা কমে গেলে কুদ্দুস ২০০৩ সালে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের যোগ দিয়ে বরিশাল বিভাগের একটি জেলার সহ-সভাপতির পদও ভাগিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বরিশালে বিএনপির নেতা ও সাবেক মেয়র সারোয়ারের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিল আব্দুল কুদ্দুস। সারোয়ার যখন সদরঘাট দিয়ে লঞ্চে বরিশাল যাতায়াত করতেন তখন সদরঘাট এলাকায় কুদ্দুসের নেতৃত্বে রাজকীয় ভাবে তাকে অভ্যন্তনা জানানো হতো। কুদ্দুসের আপন ছোট ভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম চান্দু হাওলাদার সদরঘাট শ্রমিক দলের সহসভাপতি। কোতোয়ালী থানায় সরকার বিরোধী আন্দোলন করার সময় ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। যখন তার ভাই ঘাট শ্রমিক দলের নেতা এ বিষয়টি প্রশ্ন উঠলে তখন তিনি তার আপন ভাইকে খালাতো ভাই হিসেবে চালিয়ে দেন।
এ বিষয়টি নিয়ে কোতয়ালী থানা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, ওয়াইজঘাটের আহসান উল্লাহ সড়কে ৭/১ বুড়ীগঙ্গা ভবনের কলার আড়তের কয়েক বছর পূর্বে যে কুদ্দুস ছিলেন সামান্য একজন কুলি, বর্তমানে সে ওই বহুতল ভবনের ৪৫ শতাংশের যৌথ মালিক। এ ছাড়াও গড়েছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। সমিতির নামে পরিবহনে চাঁদাবাজী, চোরাই বিদ্যুৎসহ আবাসিক মিটারের বিদ্যুৎ, বাণিজ্যিক ব্যবহার, মার্কেটের শালিস-বিচারে পক্ষপাতিত্ব করে টাকা হাতিয়ে নেয়া, হত্যা, নির্যাতন ও অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে আইজিপি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কলা কুদ্দুসের ভাই চান্দু, লাল মিয়া (লালা), ভাগ্নে মিঠু, শরীফ, মাসুম, জালাল, হারুন ও নুর আলম অন্যতম। ডিএমপি’র কোতয়ালী থানার কুমারটুলির চাঁন মিয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। এ প্রসঙ্গে কুদ্দুস হাওলাদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব এবং যত সহায় সম্পত্তি আছে সব আমি দিয়ে দিব। আমার বাবার নুর মোহাম্মদ হাওলাদার আর আমার নাম কুদ্দুস হাওলাদার। ফ্রিডম পার্টির সাথে সম্পর্কের বিষয় বলেন আমার বয়স তখন সাত থেকে আট বছর ছিল। কে করছে বা কারা করছে এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি এসএসসি পাশ করেছি ১৯৮৭ সালে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আমার বিরুদ্ধে এসব গুজব ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরকে মুঠো ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করার পরও পাওয়া যায়নি।
দেশ জার্নাল বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।