শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

নারায়ে তাকবীর “আল্লাহু আকবার” ধ্বনী ইসলামের প্রতীক

  • বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ভূমিকাঃ-“নারায়ে” শব্দ উর্দূ অর্থঃ ধ্বনী বা উচ্চ আওয়াজ। আর “তাকবীর” আরবী শব্দ অর্থঃ আল্লাহর বড়ত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব। তাই “নারায়ে তাকবীর” অর্থ তোমরা উচ্চ আওয়াজে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষনা দাও। সুতরাং কেউ “নারায়ে তাকবীর” বললে উপস্থিত মুসলমানগণ উচ্চ স্বরে বলে থাকেন “আল্লাহু আকবার” অর্থাৎ আল্লাহ মহান। নারায়ে তাকবীর “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি ইসলামের প্রতীক। মুসলমানের চিহ্ন। আজানের মাধ্যমে নবজাতকের কানে প্রথম শ্রবণ “আল্লাহু আকবার”।সালাতুল জানাজার মাধ্যমে মৃতের শেষ (চার বার) শ্রবণ “আল্লাহু আকবার”। স্থান কাল পাত্র ভেদে “আল্লাহু আকবার” বলা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাব। মুমিন বান্দাদের বিশ্বাসের প্রধান হাতিয়ার আল্লাহু আকবর। এই শব্দের বহুমুখী অর্থ এবং তাৎপর্যের মধ্যে বান্দা বিলীন হতে হতে এমন মাকামে পৌঁছতে পারে যেখানে পৃথিবীর কোনো আগুন তাকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না, কোনো শক্তি তার গতিরোধ করতে পারে না এবং কোনো বস্তু বা প্রাণী তার চলার পথে বাধা সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে না। “আল্লাহু আকবার”-এ বিলীন হতে হতে বান্দা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, স্বয়ং আল্লাহ তার সৃষ্টিকে চাকর থেকে বন্ধুর আসনে বসান।

এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহু আকবার শব্দটির তাৎপর্য কিরূপে হৃদয়-মনে ধারণ করা যাবে! বান্দা যখন সব বিষয়ে আল্লাহপাকের হুকুম-আহকাম, ইচ্ছা-অনিচ্ছা এবং শক্তিমত্তাকে তাবৎ দুনিয়ার সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেয় তখন ইমান তাকে কাছে ডাকতে থাকে। অর্থাৎ প্রকাশ্য বুক ফুলিয়ে নিজেকে আল্লাহর বান্দা ঘোষণা করুন ঠিক হজরত ঈসা (আ.)-এর মতো। তার সর্বপ্রথম উচ্চারণ ছিল إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ (আমি আল্লাহর বান্দা)। জীবনের প্রথম কথায় তিনি যখন নিজ গোলামির স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন- إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ অর্থ:আমি আল্লাহর বান্দা।(সূরা মারিয়াম : ৩০)। তখন আল্লাহপাক তাকে মহামূল্যবান দুটি প্রতিশ্রুতি দিলেন। জমিনে তার সুউচ্চ মর্যাদা নিশ্চিত করলেন এবং প্রয়োজনের সময় উর্ধলোকে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। সূরা আল ইমরানের ৫৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহর সেই ঘোষণার প্রমাণ মেলে। আল্লাহ বলেন-
إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
আর্থঃ-আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বলবেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে নিয়ে নেবো এবং তোমাকে নিজের দিকে তুলে নিবো-কাফেরদের থেকে তোমাকে পবিত্র করে দেবো। আর যারা তোমার অনুগত রয়েছে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাদের উপর জয়ী করে রাখবো। (সূরা আল ইমরান:৫৫)

এখন একটু মাথা খাটিয়ে চিন্তা করুন তো যদি একবার নিজ মুখে গোলামির স্বীকারোক্তিদানের ফলে উচ্চাসনে ঠাঁই পাওয়া যায়। একজন মুমিন বান্দা যখন স্তরে স্তরে অগ্রসর হতে হতে “আল্লাহু আকবার” এর মধ্যে বিলীন হয়ে যায় তখন চারদিকে আল্লাহর জিকির তাকে ঘিরে ধরে।

আল্লাহু আকবার এর অর্থঃ-
আল্লাহু আকবার ( اللهُ أكبرُ) এর মধ্যে দুইটি শব্দ, আল্লাহ( اللهُ)এবং আকবার ( أكبرُ)।

আল্লাহর পরিচয়:-আল্লাহ একটি আরবি শব্দ।এ শব্দটি এমন এক সত্তার জন্যে নির্ধারিত, যিনি অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বের অধিকারী, যিনি যাবতীয় পবিত্রতা, পরিপূর্ণতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার গুণাবলিতে ভূষিত এবং সকল প্রকার অসম্পূর্ণতা, অপবিত্রতা ও যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত।

আর আকবার ( أكبرُ) শব্দটি ইসমে তাফদিল বা আধিক্য বাচক বিশেষ্য, যার অর্থ মহান, সর্বশক্তিমান, অতিব বড়। তাই আল্লাহু আকবার ( اللهُ أكبرُ) অর্থ আল্লাহ মহান।

তাকবির(تَكْبِير)একটি ইসলামি পরিভাষা:-(تَكْبِير) ইহা ك-ب-ر মাদ্দাহ হতে বাবে তাফইল এর মাছদার।এর বর্ণনায় ভাষাবিদগণ বলেন:-

التكبير في الإسلام هو لفظ يشير إلى عبارة “الله أكبر”، للدلالة على أن الله أعظم وأكبر من أي شيء في الكون. ويذكر التكبير في العديد من الحالات منها في الاذان والاقامة والصلاة والجهاد وعند ذبح الذبائح، وفي الحج عند رمي الجمرات، وفي العيدين وأيام التشريق، وفي سجود التلاوة، وغيرها
মর্মার্থ:-তাকবির(تَكْبِير)একটি ইসলামি পরিভাষা। এর মাধ্যমে আরবি “আল্লাহু আকবার” বাক্য বোঝায় যার অর্থ “আল্লাহ সবচেয়ে মহান”। ইসলামে তাকবির ধ্বনির বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।আজান, ইকামত, নামাজ, জিহাদ, পশু জবাই, হজ, ঈদ-আনন্দ,তাকবীরে তাশরিক, সিজদায়ে তেলাওয়াত, মিছিল ইত্যাদি সময় আল্লাহকে স্মরণে তাকবির ধ্বনির “আল্লাহু আকবার” ব্যবহার হয়।

আল-কুরআনে আল্লাহু আকবার এর ধারণাঃ-
কুরআন কারীমের অনেক স্থানে “আল্লাহু আকবার” বলার প্রতি নির্দেশ ও অনুপ্রেরণা প্রদান করা হয়েছে। (ক)মহান আল্লাহ বলেন-
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا
অর্থ:-বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি না কোন সন্তান রাখেন, না তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহয্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি স-সম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ন বর্ণনা করতে থাকুন। (সূরা বনী ইসরাঈল:১১১)
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী তাঁর “রুহুল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন” গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসীরে বলেন-{ وكبره تكبيرا } عظمه تعظيما او قل الله اكبر অর্থ:-তাঁর(আল্লাহর) মাহাত্ন বর্ণনা করতে থাকুন অর্থাৎ বলুন “আল্লাহু আকবার”।
(খ) মহান আল্লাহ বলেনঃ- وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ অর্থ:-আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন। (সূরা আল মুদ্দাসসির:-৩)
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী তাঁর “রুহুল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন” গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসীরে বলেন:-
ويروى انه لما نزل قال رسول الله عليه السلام « الله اكبر» فكبرت خديجة ايضا وفرحت وايقنت انه الوحى لان الشيطان لا يأمر بالتكبير
অর্থ:-বর্ণিত আছে যখন এই আয়াত যখন নাজিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন “আল্লাহু আকবার”। তা শুনে হযরত খাদিজাও (রাঃ) বলেন “আল্লাহু আকবার”। এবং তিনি খুশি হন এবং বিশ্বাস করেন যে, তা (কুরআন) অহী। কেননা শয়তান “আল্লাহু আকবার” এর আদেশ করে না।
“আল্লাহু আকবার” বলা ফরজ হওয়ার স্থানসমূহঃ
০১.নামাজের শুরুতে “আল্লাহু আকবার” বলা ফরজঃ-
০২.জানাজার নামাজে তাকবীর “আল্লাহু আকবার” বলা ফরজ,
০৩.বিনা জানাজায় দাফন করলে কবরের উপর “আল্লাহু আকবার” বলা ফরজ,
০৪.পশু জবেহ করতে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলা ফরজ।

“আল্লাহু আকবার” বলা ওয়াজিব হওয়ার স্থানসমূহঃ
০১.বিতর নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর “আল্লাহু আকবার” বলা ওয়াজিব,
০২. ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর(আল্লাহু আকবার)বলা ওয়াজিব,
০৩.ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর(আল্লাহু আকবার)বলা ওয়াজিব,
০৪.জিলহজ মাসে তাকবিরে তাশরীক –এ “আল্লাহু আকবার” বলা ওয়াজিব।

বহু ইবাদতের সাথে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত:-
০১.আজান ও ইকামতে “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি সুন্নাত
০২.ইকামতে “আল্লাহ আকবার” ধ্বনি সুন্নাত
ইকামতের ১৭ বাক্যের মধ্যে প্রথমে ৪বার এবং শেষে ২বার মোট ৬বার “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত। ৫ ওয়াক্ত নামাজে মোট ৩০ বার।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে প্রতিটি মুসলমান হয়তো আজান ও ইকামত দেয়, অথবা শুনে জবাব দেয়। তাই তাকে ৩০+৩০=৬০ বার “আল্লাহ আকবার” বলতে হয়। এতে বিশ্বব্যাপী ২৫ লক্ষ মসজিতে ৬০বার করে আনুষ্ঠানিক “আল্লাহু আকবার” বলাহয় ১৫,০০,০০,০০০(পনের কোটি)বার। আর ২০০ কোটি মুসলমান বলে থাকে ১২হাজার কোটি বার।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে- পৃথিবীজুড়ে মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয় না “আল্লাহু আকবার”তথা আজানের ধ্বনি। ভৌগলিক অবস্থান থেকে বিচার করলে ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু হয় আজানের ধ্বনি। আর তা শেষ হয় পৃথিবীর শেষ প্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকায়। সময়ের তালে তালে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে নামাজের জন্য এ আহ্বান- ‘আজান’। মুমিন মুসলমানের উপর প্রতিদিন নির্ধারিত ৫ সময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ। এ নামাজের জন্য মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে নির্ধারিত সময়ে উচ্চারিত হয় সুমধুর আজানের ধ্বনি। দেশব্যাপী সময়ের ব্যবধানে পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে এ আজান। ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী পাপুয়া নিউগিনি ও ইন্দোনেশিয়ায় যখন ফজরের সময় হয় তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ধ্যা নামে। যেখানে সময়ের ব্যবধান প্রায় ৯ ঘণ্টা। ভৌগলিক অবস্থান ও সময়ের ব্যবধানের কারণে পৃথিবীজুড়ে কোথাও মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকে না আজানের ধ্বনি। ইন্দোনেশিয়া-পাপুয়া নিউগিনি থেকে ফজরের আজান শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে যেসব দেশ অতিক্রম করে অব্যাহতভাবে ফজরের আজানের ধ্বনি চলতে চলতে তা আমেরিকায় গিয়ে শেষ হয়। সেসব দেশগুলো হলো-
– ইন্দোনেশিয়া, পিলিপাইন, কোরিয়া, জাপান
– সুমাত্রা, চায়না, মঙ্গলিয়া, রাশিয়া
– মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মায়ানমার
– বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা
– ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান
– তুর্কমিনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখাস্তান
– ওমান, ইরান
– সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ইয়েমেন, ইরাক, সোমালিয়া, মোজাম্বিক, আজারবাইজান, তুরস্ক
– জর্দান, সিরিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, ইসরাইল
– মিসর, সুদান, উগান্ডা, রোমানিয়া, ইউক্রেন, কঙ্গো
– লিবিয়িা, চাঁদ, বুলগেরিয়া, গ্রীস, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, কোস্টারিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন
– নাইজার, নাইজেরিয়া, ইতালি, তিউনেশিয়া
– আলজেরিয়া, ফ্রান্স, বুর্কিনাফাসো, মালি, ঘানা, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড
– মরক্কো, স্পেন, পুর্তগাল, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, গাম্বিয়া
– ব্রাজিল, প্যারগুয়ে, ভেনিজুয়েলা, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, পেরু, ইকুয়েডোর
– নিকারাগুয়া, গুয়েতেমালা, ম্যাক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা আমেরিকা।
এভাবেই এক দেশের পর আরেক দেশে ফজর থেকে জোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা হয়ে আবার ফজরের আজান শুরু হয়। পৃথিবীজুড়ে বিরামহীনভাবে চলতে থাকে এ আজানের “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি।

সাধারণত বাংলাদেশের একটি জেলা থেকে অন্য জেলায় মৌসুমভেদে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ৩ থেকে ৫-৭ ও ১১ মিনিট পর্যন্ত আজানের সময়ের ব্যবধান হয়ে থাকে। এভাবেই এক দেশ থেকে আরেক দেশ, মহাদেশ চলতে থাকে আজানের ধ্বনি। যা মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয় না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা আমেরিকায় যখন ফজরের আজান শুরু বা শেষ হয়, তখন ইন্দোনেশিয়া জোহরের আজান শুরু হয়। এভাবেই সময়ের ব্যবধানে চলতে থাকে আজান। আল্লাহু আকবার! আল্লাহ মহান! যিনি পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তেই তার বড়ত্ব ও মানুষের কল্যাণের ঘোষণা অব্যাহত রেখেছেন। যা চলবে কেয়ামত পর্যন্ত। আর এতেই প্রমাণিত হয় যে, ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা।
০৩.আজান, ইকামতের জবাবে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
০৪.নামাজের ভিরত বহুবার “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
০৫.নামাজের পর “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
০৬.দুই ঈদের খুৎবায় “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
০৭.জেহাদের ময়দানে, জেহাদের সফরে, জিহাদের কাজে বিজয়ের প্রতীক হিসেবে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।

০৮.হজে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত :-
(ক)হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাইতুল্লাহ এর তাওয়াফ। তাওয়াফ কখনো ফরজ,কখনো ওয়াজিব,কখনো সুন্নাত,কখনো মুস্তাহাব। তাওয়াফ শুরু হবে হাজরে আসওয়াদ থেকে “আল্লাহু আকবার” ধ্বনির মাধ্যমে।
(খ)হজের মধ্যে সাফা এবং ওমারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সায়ী করা ওয়াজিব। সায়ী শুরু হবে সাফা পর্বেত থেকে “আল্লাহু আকবার” ধ্বনির মাধ্যমে।
(গ) হজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব কাজ হলো জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ। ৪৯টি কঙ্করের প্রতিটি নিক্ষেপ করার সময় “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।

০৯.ঘুমানোর পূর্বে বিছানায় “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত রাতে ঘুমানোর পূর্বে বিভিন্ন
অজিফা আছে, এর মধ্যে ৩৪বার “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
১০.দান করতে অসমর্থ হলে আল্লাহু আকবার বলা সুন্নাত

দান করা অতি মর্যাদার ইবাদত। অনেকে দারিদ্রতার কারণে দান করতে অসমর্থ, তাদের নেক বৃদ্ধির জন্য “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
১১.উপরে আরোহন করতে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
১২.তেলাওয়াতে সিজদা আদায়ে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
১৩.সুহু সিজদা আদায়ে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
১৪.শোকরের সিজদা আদায়ে দুইবার “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত। কোন সুসংবাদ পেলে আল্লাহ শুকরিয়াস্বরূপ সাজদাহ করার নিয়ম নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত আছে।
১৫.রাতে ঘুম ভাঙ্গলে“আল্লাহু আকবার”বলা সুন্নাত।
১৬.বিজয়ের সু-সংবাদে ও আগুন্তককে অভিনন্দনে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
১৭.নতুন চাঁদ দেখলে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত।
১৮.ইসলামি মিছিলে “আল্লাহু আকবার” বলা সুন্নাত। হযরত ওমার (রাঃ)এর ইসলামের গ্রহণের পর, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কেরাম “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি দিয়ে মিছিলের মাধ্যমে, সর্বপ্রথম ক্বাবা শরীফের চত্তরে প্রবেশ করে, প্রকাশ্যে সালাত আদায় করেন।

বহু ইবাদতের সাথে “আল্লাহু আকবার” বলা মুস্তাহাব
০১.জন্মের পর নবজাতককে প্রথম “আল্লাহু আকবার” শুনানো মুস্তাহাব
০২.ঈদুল ফিতরে “আল্লাহু আকবার” বলা মস্তাহাব
০৩.কবর জেয়ারতে “আল্লাহু আকবার” বলা মুস্তাহাব।
০৪.কুরআন খতমে “আল্লাহু আকবার” বলা মুস্তাহাব।

একজন মুসলমান ইবাদত হিসাবে এবং অন্য ইবাদতের সাথে ফরজ,ওয়াজিব,সুন্নাত ও মুস্তাহাব হুকুমের আওতায় দৈনিক -৬২৯ বার “আল্লাহু আকবার” বলতে হয়।
পরিসংখ্যান নিম্নরূপঃ-
পাচ ওয়াক্ত সালাতের আজান ইকামত ৬০ বার সুন্নাত।
ফজর নামাজে (চার রাকাত)০২ বার ফরজ, ২০ বার সুন্নাত।
এশরাকের (চার রাকাত)০২ বার ফরজ, ৪০ বার সুন্নাত।
চাসত নামাজে (চার রাকাত)০২ বার ফরজ, ৪০ বার সুন্নাত।
যহুর নামাজে (বার রাকাত) ০৪ বার ফরয ৬২ বার সুন্নাত।
আসর নামাজ (সুন্নাত সহ ০৮ রাকাত)০২ বার ফরজ ৪২ বার সুন্নাত।
মাগরিব নামাজ (আউয়াবিন সহ ১১ রাকাত)০৫ বার ফরজ .৫৬ বার সুন্নাত
ইশার নামাজ (৬ রাকাত সুন্নাত ও ২ রাকাত নফলসহ ১১ রাকাত)০৪ বার ফরজ,৬২ বার সুন্নাত।
বিতর নামাজে (৩ রাকাত) ০১ বার ফরজ, ০১ বার ওয়াজিব, ১৬ বার সুন্নাত।
পাচ ওয়াক্ত নামাজের পর ১৭০ বার সুন্নাত।
রাতে শোয়ার সময় ৩৪বার সুন্নাত।
রাতে জাগলে ২বার সন্নাত।
তাহাজ্জুদ নামাজে (৮ রাকাত) ০৪ বার ফরজ,৪০বার ফরজ।
সর্বমোট ফরজ ২৬ বার, ওয়াজিব ০১ বার, ৬০২ বার সুন্নাত।

উপসংহানঃ-প্রমাণিত হলো “আল্লাহু আকবার” বলা শুধুই ইবাদতই নহে বরং সাথে সাথে শেয়ারে ইসলাম তথা “ইসলামের প্রতীক”। মহান আল্লাহ প্রতিটি মুসলমানের দেহ-আত্মায়, হৃদয়ে-মনে “আল্লাহু আকবার” এর মর্ম প্রবেশ করাতে চান । যে সকল মুসলমান ভাই “আল্লাহু আকবার” শ্লোগান থেকে দূরে তারা একটু ভাবুন। আপনি কতটুকু মুসলমান! আল্লাহ আপনাকে রহম করুন !

(সংকলন)

মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মজুমদার
অধ্যক্ষ,হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর.এম.কামিল মাদরাসা।

দেশ জার্নাল বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----