বেলকুচিতে জনতা ব্যাংকের ভল্টের পাঁচ কোটি ২২ লাখ টাকা উধাও, টাকার সন্ধানে মাঠে বাংলাদেশ ব্যাংক
উজ্জ্বল অধিকারী: জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ব্যাংকের ক্যাশভোল্ট থেকে ৫ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার হদিস নেই। টাকা উধাও এর এ ঘটনায় এরই মধ্যে তদন্ত টিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকার অনুসন্ধানে কাজ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে এঘটনায় রোববার রাতে তামাই শাখার ব্যাংক ম্যানেজার সহ আরো দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখা হইতে ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিন (৪২) সিরাজগঞ্জ ধানবান্দি পৌর এলাকার মো:হারান শেখের ছেলে, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম (৩৪) বগুড়া ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে, ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩১) সিরাজগঞ্জ বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে।
জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো:নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ব্যাংকের ম্যানেজার সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখা ক্যাস লেনদেনে সন্ধেহ পরিলক্ষিত হলে গত রবিবার ২৪ মার্চ তামাই শাখায় উপস্থিত হয়ে লেনদেনের সমস্থ কিছু অডিট শেষে দেখতে পান ক্যাশভোল্টে পাঁচ কোটি বাইশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা হিসাব গড়মিল পাওয়া যায়। এসময় তামাই জনতা ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক ও অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন সদ উত্তর দিতে পারেনি। পরে তাদের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে রাতে পুলিশ তাদের আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। যেহেতু বিষয়টি টাকা লেনদেনের সেই কারনে অভিযোগ পত্রটি দুদকে পাঠানো হয়েছে।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, লিখিত অভিযোগ সহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে আমাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। যেহেতু এটি ব্যাংকিং অর্থনৈতিক হিসাব তাই বিষয়টি দুদুকে প্রেরণ করা হয়েছে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে সরজমিনে সোমবার সকালে তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন করে এখানে দায়িত্ব নিয়েছেন কামরুল হাসান। এসময় দেখা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত টিম পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে তদন্ত টিম তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুই তদন্ত কর্মকর্তারা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া অফিসের যুগ্ন পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেন ও সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক।
এদিকে জানা যায়, হিসাব অনুসারে তামাই শাখার ক্যাশভোল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লক্ষ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা রয়েছে। বাকি ৫ কোট ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিশাল অংকের হিসাব অনুসারে ক্যাশভোল্টেই মজুদ থাকার কথা ছিলো। এদিকে সকালে অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিসের সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ক্যামেরাটি নতুন না সংস্কার করা হচ্ছে সে বিষয়ে ব্যাংকের কেউ মুখ খোলেনি। অন্য দিকে এত পরিমান টাকা ক্যাশভোল্ট থেকে একদিনেই সড়ানো হয়েছে নাকি বা দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম চলে আসছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তামাই জনতা ব্যাংক পিএলসির নতুন শাখা ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী অফিসের বিভিন্ন কর্তারা কাজ করছে। তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিবেন।
তদন্ত টিমের প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ন পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঠিক কত টাকার ঝামেলা রয়েছে তা এখন বলা সম্ভব নয়। আমরা অত্যন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। টাকা সরানো হয়েছে কি না বা হিসাবের কোথাও ভুল হয়েছে তা ক্ষতি দেখা হচ্ছে। বিষয়টি ঠিক কতদিন ধরে হয়ে আসছে সেটাও এখন দেখার বিষয়।
এদিকে এঘটনা জানাজানি হবার পর থেকেই ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্যাংকে এসে ভিড় জমাচ্ছে। তাদের টাকা ঠিক আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছে। ব্যাংকের আগ্রহ রাজু জানান, ব্যাংকের টাকা চুরি দেওয়ার খবর শুনে এসেছি। তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে পুলিশ আটক করেছে ব্যাংক খোলা আছে কিনা তাই দেখতে এসেছি। আর এক গ্রাহক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ব্যাংক হল টাকা রাখা নিরাপদ স্থান, অথচ এখান থেকেই টাকা লোপাট হচ্ছে। আমরা কাকে বিশ্বাস করি।
দেশ জার্নাল বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।