নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর নতুন করে বিভিন্ন মহলে আলোচনা এবং গুঞ্জন চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর নতুন করে চাপ দেবে-এমন কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। অনেক বুদ্ধিজীবী যারা ভিসা নীতির প্রশ্নে সরব হয়েছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী কী করবে তার ফিরিস্তি প্রকাশ করেছিলেন, তারা এখন নতুন করে আবার মুখ খুলেছেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা নানারকম বক্তব্য দিচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও অনেকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। আরও বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে বাংলাদেশের ওপর-এমন সব বক্তব্য ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে'। এর মধ্যেই বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং না কিনে ফ্রান্স থেকে এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী সরকারকে নতুন ভাবে চাপ দিচ্ছে?আর এই জন্যই কী আজিজ আহমেদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো? সামনে কী আরও কারও ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিতে পারে'? কূটনীতিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিষয়টি তেমন নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে এখনই কোন কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে না। কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অনুমাননির্ভর। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নভেম্বর পর্যন্ত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবে। আগামী নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন হচ্ছে জটিল এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। জো বাইডেন নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন কি না, ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সঙ্কটের মুখে-এমন কথা বলা হচ্ছে জোরেশোরে।বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, নির্বাচন থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ডেমোক্রেটরা সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই সব কিছু নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন অভ্যন্তরীণ অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তাই বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে ভাবার সময় আপাতত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেই। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানামুখী চাপে রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু এবং ইসরায়েলের বাড়াবাড়ি সবকিছু মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির মূল মনোযোগ এখন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো নতুন করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে মার্কিন অনুগ্রহপুষ্ট ইসরায়েল বড় ধরনের চাপে পড়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণও ইসরায়েলের ওপর আলগা হয়ে পড়েছে।
এই সব কিছু নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্র একটি বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। তা ছাড়া এই অঞ্চলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে নড়বড়ে হয়ে গেছে। বিশেষ করে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল পুরোপুরি ভাবে চীনের করতলগত হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যেমন মার্কিন আধিপত্য নিঃশেষিত প্রায় ঠিক তেমনই এই অঞ্চলেও একমাত্র বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়া তাদের কোন বিশ্বস্ত মিত্র নেই। সব কিছু মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে বড় ধরনের কোন জটিলতায় যাবে না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।' সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মার্কিন কোম্পানি গুলো যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে, তারা তাদের মুনাফার টাকা নিয়ে যেতে পারছে না।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে তারা তাদের লভ্যাংশের টাকা যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার ব্যাপারে সাময়িক একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র গুলো বলছে, এই জটিলতা কাটানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে এবং সেই আগ্রহের কারণে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে এখনই কোনরকম বিরূপ সম্পর্কে যেতে চায় না। তৃতীয়ত, ড. ইউনূস সহ সুশাসন সংক্রান্ত কিছু ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের ওপর নজর রাখছে। কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনই নেতিবাচক দিকে যাবে না কলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংবাদটি শেয়ার করুন।
Copyright © 2024 দেশ জার্নাল. All rights reserved.