সিরাজগঞ্জে বীরমুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চায় সুজাবত আলীর পরিবার
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে মাতৃভূমিকে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানির নেতৃত্বে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিলেও ৫২ বছরেও বীরমুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি বলে দাবি করছে মৃত সুজাবত আলীর পরিবার।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার মধ্য ভদ্রঘাট (নাটাপাড়া) গ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজাবত আলীর মেয়ে লাভলী খাতুন এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে লাভলী খাতুন বলেন, আমার পিতা একজন প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধা। নিজের জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে ২৫ মার্চের পরে খুলনা সোনালী জুট মিলস এ চাকুরীরত থাকা অবস্থায় কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানির নেতৃত্বে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এরপর যশোরের বেনাপুল হয়ে ভারতে ট্রেনিং করেন। প্রায় ১ মাস পরে বাড়ি ফিরে পাবনা ৭নং সেক্টরের অধীনে সাব-সেক্টরের আঞ্চলিক ভিক্তিক গড়ে উঠা মুক্তিবাহিনী পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরে (মির্জা বাহিনী) যোগদান করেন। এরপর পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে কামারখন্দের ভদ্রঘাট ও নওগাঁর বিভিন্ন রনাঙ্গনে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। আমার পিতা যুদ্ধ শেষ করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় এনে আবার ১০ জানুয়ারিতে দীর্ঘ ৯ মাস পর খুলনা সেনালী জুট মিলস এ যোগদান করেন। সেখানেও তিনি দেশী দালাল ও বিহারী নিধন করেন। এরই এক পর্যায়ে চাকুরীরত অবস্থায় মিলের শ্রমিকদের বিল নিয়ে আসার পথে তার বুঝে উঠার আগেই ট্রেন ডাকাতিতে সুটকেসে টাকাসহ যুদ্ধের কিছু কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায় ডাকাত দল। পরে স্থানীয় কিছু লোক তাকে বাসায় পৌছে দিয়ে যায়। এর তিন দিন পর তার জ্ঞান ফেরে। তারপর ১৯৮০ সালে রাজনৈতিক সমস্যার কারণে তার প্রাননাশের হুমকী থাকায় ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে বাড়ী চলে আসেন। কিন্তু বাড়ি চলে আসার পর সাংসারিক অবস্থা খারাপ থাকায় ও বাবার অসুস্থ্যতার কারণে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম আছে
কিনা জানতে পারেন নাই। পরবর্তীতে অসুস্থ্য অবস্থায় ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুবরন করেন।
তবে বাবার মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছেছিল বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে যেন স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ জন্য আমি তার মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বাবার স্বীকৃতি চাই। ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক খাঁন বলেন, সুজাবত আলী ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবধান রেখেছিলেন৷ কিন্তু যুদ্ধের ৫২ বছরেও তিনি স্বীকৃতি পায়নি। এটা সত্যিই দুঃখজনক।
এ প্রসঙ্গে কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, সুজাবত আলী আমার পরিচিত ছিলেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি ৭নং সেক্টরের অধিনে যুদ্ধ করলেও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই।
দেশ জার্নাল বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।