শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভুয়া মামলা দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, আইনজীবীর ১৮ মাসের কারাদণ্ড

লক্ষ্মীপুরে ভুয়া মামলার কাগজপত্র দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এক প্রবাসীর কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ মামলার রায়ে মনসুর আহম্মদ দুলাল নামে এক আইনজীবীকে ১৮ মাসের দণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

একই মামলায় আদালত মনসুর আহম্মদ দুলালের সহযোগী আনসার উল্যা চৌকিদারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের সাজার রায় দিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ১,  নুরশাত জামান এ রায় দেন।  আদালতের পেশকার মো. সাইফুদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এটি ওই আইনজীবীর প্রথম অপরাধ বিবেচনায় রেখে প্রবেশনে প্রধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ঐ কারাদণ্ডাদেশ এবং জরিমানা পরবর্তী দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দেন আদালত। প্রবেশন কালীন সময়ে তিনি গরিব ও অসহায়দের পক্ষে মামলায় লড়বেন। পাশাপাশি কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ভুক্তভোগীর হয়ে তাকে মামলায় লড়তে হবে।

মামলার বাদী নুর নবী সাংবাদিকদে বলেন, আদালতে মামলা চলাকালীন তার পক্ষে কোনো আইনজীবী কাজ করেননি। তাই তিনি নিজেই মামলাটি পরিচালনা করেন। আদালত পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় দিয়েছেন।

তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে এবং ওই মামলা থেকে তাদের পরিত্রাণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কৌশলে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দণ্ডপ্রাপ্ত দুইজন।
পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত লক্ষ্মীপুর সদর থানাকে এফআইআর দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর সদর থানায় আইনজীবী মনছুর আহম্মেদ দুলাল ও চৌকিদার আনসার উল্যার বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

প্রতারিত মামলার বাদী রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের  মৃত মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে।
দণ্ডপ্রাপ্ত আইনজীবী মনছুর আহম্মদ দুলাল একই উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের আলী আহাম্মদের ছেলে। আরেক দণ্ডপ্রাপ্ত আনসার উল্যা বামনী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদ ঢালীর ছেলে ।
ফের আইনজীবী দুলাল বরিশাল আদালত থেকে নুর নবীর নামে একটি ডাকাতি ও হত্যার মামলা লক্ষ্মীপুর আদালতে এসেছে জানিয়ে তার কাছ থেকে আবারও ৫ লাখ টাকা দাবি করলে নুরনবী তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা দেয়। কয়েকদিন পর নুর নবীর নামে চান্দিনা থানা থেকে একটি মামলা এসেছে জানিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করলে তিনি তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দেন।

এছাড়া বাড়ির একটি বাটোয়ারা মামলার রায় করিয়ে দিবে বলে আরও ৫০ হাজার টাকা নেন দুলাল।

বাদীর অভিযোগ, বার বার কৌশলে তার কাছ থেকে মোট ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আইনজীবী দুলাল। তার সহযোগী আনসার উল্যা সে টাকার ভাগ পেয়েছেন। প্রতারণার বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে রায়পুর থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করলে নুর নবীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ও তার স্ত্রীর সাথে অপকর্মের ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দিয়ে ১৫০ টাকার অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। ওই স্ট্যাম্প ব্যবহার করে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাকে বিভিন্ন মামলার আসামী করার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা।
২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর ভুক্তভোগী নুর নবী বাদী হয়ে আইনজীবী মনসুর আহম্মদ দুলালকে প্রধান করে তার সহযোগী আনসার উল্যাকে ২য় আসামী করে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করেন সদর থানার সে সময়ের পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে তিনি ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল  করা হয়।

দেশ জার্নাল বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----