সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বেলুনে করে দক্ষিণ কোরিয়ায় ময়লা পাঠাল উত্তর কোরিয়া

সংবাদের আলো ডেস্ক: ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দুই কোরিয়া বিভক্ত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের ভিতর সম্পর্ক কখনো ভালো হয় নি, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। তবে সম্মুখ সমর যুদ্ধ প্রকটভাবে হয় না তাদের। এদিকে শান্তিচুক্তির কারণে সীমান্তেও তেমন উত্তেজনা নেই। তবে পশ্চিমা মদদপুষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে প্রায়ই উত্তেজনা তৈরি হয় উত্তর কোরিয়ার। দেশটির পাগলাটে নেতা কিম জং উন প্রায়ই হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসেন। তবে এবার হুঁশিয়ারি না একেবারে হামলাই করে বসল উত্তর কোরিয়া। তবে অস্ত্র দিয়ে নয়, বরং ময়লা দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে এবার এক অভিনব কৌশল ব্যবহার করেছে উত্তর কোরিয়া।

১টি বা ২টি না কমপক্ষে ২৬০টি বেলুনের সঙ্গে মানুষের মলসহ ময়লা-আবর্জনাভর্তি ব্যাগ জুড়ে দিয়ে এগুলোকে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির ভেতরে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার (২৯মে) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়লা–আবর্জনা নিয়ে উড়ে আসা বেলুনগুলোকে যেন কেউ না স্পর্শ করে—সেই বিষয়েও সতর্কতা জারি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। পাশাপাশি সন্দেহজনক পদার্থ থাকার আশঙ্কায় ময়লা–আবর্জনাভর্তি ব্যাগগুলো থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশটির ৯টি প্রদেশের ৮টিতেই ময়লাসহ উড়ে আসা বেলুন পাওয়া গেছে। এগুলোকে এখন বিশ্লেষণ করে দেখছে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ।

১৯৫০-এর দশকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের সময় থেকেই উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণার অংশ হিসেবে বেলুন ব্যবহার করে এসেছে। এ অবস্থায় নতুন বেলুনগুলোতে ময়লা–আবর্জনার সঙ্গে উত্তর কোরিয়া কোনো প্রোপাগান্ডা লিফলেট পাঠিয়েছে কি না সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনার কয়েকদিন আগে উত্তর কোরিয়া জানিয়েছিল, দক্ষিণ কোরিয়ার আন্দোলন কর্মীরা উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত এলাকায় ঘন ঘন লিফলেট এবং অন্যান্য আবর্জনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তারা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উত্তর কোরিয়ার এমন হুঁশিয়ারির কয়েক দিনের মধ্যেই সর্বশেষ বেলুন উড়ে আসার ঘটনাটি ঘটেছে। গত রোববার উত্তর কোরিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম কং ইল এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘শিগগিরই সীমান্তের ওপারে দক্ষিণ কোরিয়ার ভেতরে ময়লা–আবর্জনা চালান করা হবে। এগুলো অপসারণের জন্য কতটুকু সামর্থ্যের প্রয়োজন তা বুঝতে পারবে দেশটি।’ ময়লাসহ বেলুন উড়ে আসার ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং বিশেষ করে রাজধানী সিউলের উত্তর অংশে বসবাস করা নাগরিকদের কাছে মঙ্গলবার দিনের শেষ ভাগে খুদে বার্তা পাঠিয়েছে রাজ্য কর্তৃপক্ষগুলো।

এসব বার্তায় নাগরিকদের বাড়ির বাইরের কাজকর্ম নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, ময়লা–আবর্জনাসহ এ ধরনের কোনো বেলুন সদৃশ বা অচেনা বস্তু নজরে পড়লেই যেন তাঁরা নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পগুলোকে অবহিত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কিছু ছবিতে দেখা গেছে, সাদা রঙের গ্যাস বেলুনের সঙ্গে উড়ে এসেছে টয়লেট পেপার, কালো মাটি, ব্যাটারির মতো পরিত্যক্ত আরও বিভিন্ন আবর্জনা। কিছু ছবিতে ঘটনাস্থলের কাছে দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ ও সেনাসদস্যদের অবস্থান করতেও দেখা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ছড়িয়ে–ছিটিয়ে যাওয়া কিছু আবর্জনাকে মানুষের মল হিসেবেও সন্দেহ করা হচ্ছে। দেশটির সেনাবাহিনী এমন কাজকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি আমাদের জনগণের নিরাপত্তাকে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। বেলুন উড়ে আসার ঘটনায় উত্তর কোরিয়া সম্পূর্ণভাবে দায়ী। আমরা উত্তর কোরিয়াকে অবিলম্বে এই অমানবিক ও নৃশংস কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কঠোরভাবে সতর্ক করছি।’

অতীতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও উত্তর কোরিয়ার দিকে পিয়ংইয়ংবিরোধী লিফলেটের পাশাপাশি চকো পাইয়ের মতো উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ বিভিন্ন বস্তু বেলুনে করে পাঠিয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাকটিভিস্টরা। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ ধরনের কাজকে অপরাধ আখ্যা দিয়ে আইন পাস করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে।

দেশ জার্নাল বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----