শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

লাবনির চিঠি

নাজমুল হাসান
লাবনির আর আমার আজ বিকাল চারটায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা। আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যাবো। ওখানে দুজন নতুন করে বাঁচবো সাথে বাঁচবে আমাদের ভালোবাসা। সম্পূর্ণ পরিকল্পনা শেষ। দুপুর দুইটায় লাবনি ম্যাসেজ ও বাসা থেকে বের হয়েছে। ওর ম্যাসেজ পেয়ে আমিও রেডি হয়ে বসে আছি আমার বন্ধু মাহিনের অপেক্ষায়। মাহিন আমাকে ওর বাইকে করে লঞ্চঘাট পর্যন্ত দিয়ে আসবে। বাসায় শুধু আমি, বাবা আর জান্নাত আপু আছে। বাবা ঘুমাচ্ছে আপুও। কোন বাধা ছাড়াই বের হয়ে যেতে পারবো। অবশ্য খুব একটা ঝামেলাও হবে না যদি সবাই জেগে থাকে কারণ মাহিনের সাথে আমি প্রায়ই ঘুরতে বের হই। আমি শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছি, ঠিক ওই সময় বাবা ডাক দিলো। কিন্তু আমি শুনেও না শুনার ভান করে শুয়ে আছি। বাবা আরো একবার ডাক দিলো আমি আসতেছি বলে এখনো শুয়েই আছি। লাবনি ম্যাসেজ দিয়েছে ও লঞ্চঘাট পৌঁছে গেছে। লাবনিকে রিপ্লে দিবো তখনই জান্নাত আপু চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠলো। কী হলো? দৌড় দিয়ে যাওয়ার সময় মোবাইল টা হাত থেকে পড়ে আমার পায়ের নিচে পড়লো, তখন আমার মোবাইলের দিকে কোন মনোযোগ ছিলো না। মোবাইলের দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে গেলাম পাশের রুমে। যেয়েই দেখি বাবার মুখ থেকে কাশির সাথে রক্ত বের হচ্ছে এবং জান্নাত আপু বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। তখনই মাহিন চলে আসলো, আপুকে বাসায় রেখে মাহিন সহ বাবাকে নিয়ে রওনা হলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে। আমার ফোনের ডিসপ্লে ভেঙে গেছে। বাবার এই অবস্থায় ফোনের কথা আর মাথায় আসলো না। লাবনির কথা মাথায় আসলেও যোগাযোগ করার কোনো উপায় তখন ছিলো না কারণ বাবাকে নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। বাবাকে ডাক্তার দেখিয়ে হসপিটালে ভর্তি করতে করতে এগারোটা বেজে যায়। হসপিটালে মা আর ছোট ভাই আসে সাড়ে এগারোটার সময়। এতসব ব্যস্ততার মাঝে লাবনির কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। রাত ১২:৩৫ মিনিটে মাহিনের ফোন থেকে লাবনির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু ওর ফোন বন্ধ।
পরদিন বাবাকে বাবাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাই। চারদিন ঢাকায় থাকার পর বাবার শরীরের কিছুটা উন্নতি হয়। এই কয়েকদিন লাবনির সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করতে পারিনি। ঢাকা থেকে বাসায় আসার পর লাবনির বান্ধবী ঝিলিকের সাথে দেখা করি। ঝিলিক আমাকে লাবনির লেখা একটা চিঠি দেয়। লাবনির চিঠি….

প্রিয় নাজমুল,
যখন চিঠিটা তুমি পাবে তখন হয়তো আমি থাকবো না। লঞ্চঘাটে তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বিকাল থেকে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা থেকে ঘন কালো রাত। আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আসবে কিন্তু তুমি তো আসোনি। আমি তো তোমার জন্য নিজের বাবা-মা, ভাইবোন ছেড়ে সব ছেড়ে চলে এসেছিলাম কিন্তু তুমি..! অনেক রাত হয়ে যায় কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম বাসায় ফিরে যাবো। বাসায় ফেরার পথে তিনটা হিংস্র হায়না এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার উপর। তিনটা হায়েনা নৃশংস ভাবে তাদের দৈহিক খুদা মেটায়। আমি হাজার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারি নি তাদের থেকে। যখন তারা দুর্বল হয়ে আসে আমি মুক্তি পাই তাদের থেকে। আমাকে মারার চেষ্টা করলেও ভাগ্যের সহায় বেঁচে যাই জানোয়ার গুলোর হাত থেকে। কিন্তু বেঁচে ফিরে আসার পর আমার ঘেন্না লাগছিলো আমার শরীরের উপর। বাসায় ফিরে আসার পর শুনতে হয় পরিবারে মুখে বিশ্রী কথা। এত আঘাত আমাকে আর বাঁচতে দিলো না তাই এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হলো আমায়। বাঁচতে পারলাম না এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। ভালো থেকো….
ইতি
তোমার লাবনী।

নাজমুল হাসান

শিক্ষার্থী,লক্ষীপুর সরকারি কলেজ।

দেশ জার্নাল বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো মন্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো।

----- সংশ্লিষ্ট সংবাদ -----